কমরেড, কিছুকাল আগেই বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারেরই আমলে ফান্ডামেন্টাল রুলস-এর FR-56(J) এবং CCS Pension Rules (2021)-এর 42 নম্বর ধারার প্রয়োগ করে ৫৫ বছরের বেশি বয়সী কর্মচারীদের (গ্রূপ-সি) জোর করে রিটায়ারমেন্টে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ পরবর্তী সময়ে কিছু ডিপার্টমেন্টে কিছু ক্ষেত্রে তা কার্যকর করা হয়েছিলো। সে সময় ডাক দপ্তরের অভ্যন্তরে NFPE-র প্রবল প্রতিবাদ আন্দোলনের ঝড় ওঠায় অন্তত আমাদের দপ্তরে প্রশাসন এই দানবিক ব্যবস্থা কায়েম করতে পারেনি। আমরা খুব সংক্ষেপে যদি দেখি , এই আইনে বলা আছে সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারী ডিপার্টমেন্ট প্রতি কোয়ার্টারে পঞ্চান্ন-উর্ধ্ব বয়স অথবা ত্রিশ বছর চাকরি করেছেন এমন কর্মচারীদের পারফরম্যান্স বিচার করবেন এবং তালিকা প্রস্তুত করবেন। সেই তালিকাতে যে সমস্ত কর্মচারী অযোগ্য বিবেচিত হবেন, তাঁদের তিন মাসের আগাম নোটিস অথবা তিন মাসের বেতন দিয়ে সোজা ঘাড় ধরে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হবে। কোন সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান বা মাপকাঠি বা নির্দিষ্ট কোন বিজ্ঞানসম্মত ফর্মুলা এক্ষেত্রে আইনে নেই, প্রশাসনের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। ইতিমধ্যেই ভারতীয় রেল, কর্মীবর্গ ইত্যাদি ডিপার্টমেন্টে একাধিকবার এই অর্ডার প্রয়োগ করা হয়েছে এবং যে কর্মচারীদের অসময়ে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে তাঁরা কোর্টে গিয়েও সুবিচার পাননি এই যুক্তিতে যে এটা কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়। সংশ্লিষ্ট কর্মচারী যে পরিষেবা দিচ্ছেন তার মান জনস্বার্থের পক্ষে যোগ্য নয় সেই কারণে তাঁকে জোর করে রিটায়ার করানো হচ্ছে। গত ২৭/৮/২০২৪ তারিখে হঠাৎই দিল্লির ডাইরেক্টরেট থেকে সার্কেলগুলিকে এ বিষয়ে একটি কড়া চিঠি দেওয়া হয় এবং সেই অনুযায়ী সমস্ত রিজিওনাল অফিসে বোর্ড তৈরি করে কর্মচারীদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। খুব দ্রুতই সেই লিস্ট থেকে ছাঁটাইযোগ্য কর্মচারীদের নাম চূড়ান্ত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। উক্ত আইন অনেক পুরোনো হলেও বোঝাই যাচ্ছে যে ডাক বিভাগে আমাদের এনএফপিই ও গ্রুপ সি সংগঠনের স্বীকৃতি বাতিল হবার পরেই প্রশাসন এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস পেয়েছে। তথাকথিত বোর্ডের সুপারিশ কার্যকর হলে বহু সংখ্যক অপছন্দের কর্মচারীকে অথবা প্রতিবাদী কর্মচারীকে ডাক প্রশাসন কর্মক্ষেত্র থেকে এখনই মাত্র তিন মাসের বেতন দিয়ে অপসারিত করতে পারবেন। এই গোটা প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে দেশ জুড়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কন্ঠ রুদ্ধ করবার যে প্রক্রিয়া, তার অন্যতম পদক্ষেপ। চাকরি করতে হলে অনুগত, অধিকারহীন এবং বশংবদ হয়ে থাকতে হবে, নতুবা ৫৫ বছর বয়স অথবা ত্রিশ বছর চাকুরী হলেই আপনি অযোগ্য বিবেচিত হবেন। এই ঝুঁকির মুখে অসহায় কর্মচারীকে ঠেলে দেওয়ার পথে ডাক প্রশাসন তথা ভারত সরকার খুব দ্রুত হাঁটছেন। বলাবাহুল্য যে একমাত্র আমাদের শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন এই প্রক্রিয়াকে এতদিন রুদ্ধ করে রেখেছিল এবং রুদ্ধ করে রাখার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু ডিপার্টমেন্টের ভেতরে অনুগত ট্রেড ইউনিয়ন কে তৈরি করে তাকে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রাখলে এই ধরনের কাজ করতে কোনো অসুবিধা হয় না। এখান থেকেই আমরা বুঝতে পারছি যে কর্মচারী দের দ্বারা পরিত্যাজ্য একটি অস্বীকৃত সংগঠনকে নিয়ম বিরুদ্ধভাবে এত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তার সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করবার এত মরিয়া তাগিদ কিসের জন্যে! প্রশ্ন করতে চাই, স্বীকৃতিবিহীন একটি সংগঠন যারা যেকোনো নির্দেশ বেরোলেই কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছা এবং কর্মচারীহিত, বিভাগহিত ইত্যাদি দেখতে পান, তারা এই ধরনের অমানবিক অর্ডারগুলি বেরোনোর সময় কোথায় থাকেন এবং কর্মচারীদের কাছেই বা কোন সাফাই নিয়ে মুখ দেখান। আর একটি তথাকথিত জাতীয়তা বাদী সংগঠন এর কোনো ব্যাপারেই কোনো ভূমিকা নেই। আমরা NFPE-ভুক্ত সমস্ত ডাক কর্মচারী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে সংগঠন নির্বিশেষে সমস্ত ডাক কর্মচারীদের কাছে এই রকম একটি মধ্যযুগীয় স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মচারী ছাঁটাই-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, এবং তাঁবেদার, প্রতিবাদহীন সংগঠনগুলির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।। AIPEU

Post a Comment

0 Comments